গোলটেবিল বৈঠক

প্রথম গোল টেবিল বৈঠক :

  • ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ২৭শে মে সাইমন কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশিত হলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র‍্যামসে ম্যাকডোনাল্ড সাইমন কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী এবং মহাম্মদ আলী জিন্নার অনুরোধে ভারতের রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের প্রথম গোল টেবিল বৈঠক আহ্বান করেন ।
  • ১৯৩০ সালের ১২ নভেম্বর মহামান্য পঞ্চম জর্জ লন্ডনের হাউজ অফ লর্ডসে এই গোল টেবিল বৈঠক উদ্বোধন করেন এবং সভাপতিত্ব করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রামসে ম্যাকডোনাল্ড।

অংশগ্রহণকারীরা

  • কংগ্রেস ব্যতীত দেশীয় রাজ্যের প্রতিনিধিগণ এই বৈঠকে যোগদান করেছিলেন ।
  • ১৬ জন সদস্য ব্রিটিশ রাজনৈতিক পার্টি থেকে
  • ১৬ জন সদস্য ভারতীয় রাজা থেকে
  • ৫৮ জন সদস্য ব্রিটিশ ভারত থেকে প্রথম গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান ।
  • মুসলিম লীগের হয়ে যোগদান মোহাম্মদ আলী , মোহাম্মদ সফি, জিন্না , আগা খান এবং ফজলুল হক ।
  • হিন্দু মহাসভার পক্ষ থেকে মুঞ্জে ও জয়কার যোগদান ।
  • ইন্ডিয়ান লিবারাল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে যোগ দেন তেজ বাহাদুর সপ্রু , চিন্তামণি , শ্রীনিবাস শাস্ত্রী ।
  • শিখ সম্প্রদায়ের পক্ষে যোগ দেন সর্দার উজ্জ্বল সিং ।
  • ডিপ্রেসড ক্লাসের পক্ষে যোগ দেন ডঃ বি আর আম্বেদকর ।

আলোচ্য বিষয়বস্তু

  • যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো
  • আইনসভার কার্যনির্বাহী দায়িত্ব
  • প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা
  • উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ এবং সিন্ধু প্রদেশ
  • ভারত থেকে ব্রহ্মদেশ আলাদা করা হবে ।
  • প্রতিরক্ষা পরিষেবা
  • ভোটাধিকার
  • বি. আর. আম্বেদকারের দাবী করা তপশিলি জাতি ও উপজাতির জন্য পৃথক নির্বাচন।

ভারতের বৃহত্তম জনসংখ্যার প্রতিনিধি জাতীয় কংগ্রেস এই গোলটেবিল বৈঠকে অনুপস্থিত থাকায় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয় নি । ভারতের সংবিধান রচনায় জাতীয় কংগ্রেস অংশগ্রহণ করবে এই আশায় পরবর্তী অধিবেশন পর্যন্ত গোলটেবিল বৈঠক মুলতুবি রাখা হয় । প্রথম গোল টেবিল বৈঠক ১৯শে জানুয়ারি ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চলেছিল।

দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠক :

লন্ডনে অনুষ্ঠিত প্রথম গোল টেবিল বৈঠকে জাতীয় কংগ্রেসের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত না থাকায় বৈঠকের উদ্দ্যেশ্য বিফলে যায়। কারন ভারতের অধিকাংশ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করা জাতীয় কংগ্রেসকে উপেক্ষা করে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে সম্ভব ছিল না। প্রথম গোল টেবিল বৈঠকের অমীমাংসিত বিষয়বস্তুগুলি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য জাতীয় কংগ্রেসের উপস্থিতি এবং সমর্থন প্রয়োজন ছিল। এইমত অবস্থায় ১৯৩১ সালের ৫ই মার্চ গান্ধী-আরউইন চুক্তি বা দিল্লী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং জাতীয় কংগ্রেস দ্বিতীয় গোল টেবিল বৈঠকে যোগদানে রাজি হয়।

১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ৭ সেপ্টেম্বর লন্ডনে দ্বিতীয় গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ।

জাতীয় কংগ্রেসের একমাত্র প্রতিনিধি রূপে গান্ধিজি ও ভারতীয় মহিলা সমাজের প্রতিনিধি রূপে সরোজিনী নাইডু এই বৈঠকে যোগদান করেছিলেন । এই বৈঠকে আরো 30 জন নতুন প্রতিনিধি যোগদান করেন । এই বৈঠকে যোগদান কারী দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নেতারা ছিলেন আম্বেদকর , সপ্রু , জয়কার , মালব্য প্রমুখ ।

গান্ধী দাবি করেছিলেন -

  • জাতীয় কংগ্রেস একাই ভারতবর্ষে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব করবে।
  • তপশিলি জাতি ও উপজাতি হল হিন্দু ,তাদের সংখ্যালঘুর মান্যতা দেওয়া হবে না।
  • মুসলমান বা অন্যান্য সংখ্যালঘুদের জন্য আলাদা আলাদা ভোটার বা বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকা উচিত নয়।

মুসলিম লিগ সমেত ভারতের অন্যান্য প্রতিনিধিবৃন্দ গান্ধিজির প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করলে কোনো সুস্পষ্ট সিদ্ধান্তে আসা হয় নি । ফলে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় ।

গান্ধীজী 6 ডিসেম্বর লন্ডন ত্যাগ করেন 28 ডিসেম্বর শূন্যহাতে মুম্বাই ফিরে আসেন এবং পুনরায় আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করেন।

তৃতীয় গোলটেবিল বৈঠক :

  • 1932 খ্রিস্টাব্দের 17 নভেম্বর থেকে 24 ডিসেম্বর পর্যন্ত লন্ডনে তৃতীয় গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ।
  • কংগ্রেস তৃতীয় গোলটেবিল বৈঠক বয়কট করে ।
  • মাত্র 46 জন প্রতিনিধি এই অধিবেশনে যোগ দেন ।
  • 1933 খ্রিস্টাব্দে হোয়াইট পেপার প্রকাশ করা হয় এবং হাউস অব কমন্সের উত্থাপন করা হয় । শেষ পর্যন্ত 1935 খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনে এটি প্রকাশিত হয় ।

তেজ বাহাদুর সপ্রু এবং বি. আর. আম্বেদকর তিনটি গোল টেবিল বৈঠকে যোগদান করেন।